হারিয়ে যাওয়া শৈশব: পথের ধুলোয় মাখা জীবন
- আপডেট সময় : ১১:১৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫ ১৯৪ বার পড়া হয়েছে
আমাদের চারপাশের ব্যস্ত শহর, কোলাহলপূর্ণ রাস্তা আর উঁচু দালানগুলোর মাঝে আমরা প্রায়ই কিছু ছোট ছোট মুখ দেখতে পাই। ছেঁড়া জামাকাপড়, রুক্ষ চুল আর মলিন চেহারার এই শিশুরা আমাদের কাছে খুব পরিচিত, তবুও যেন তারা এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। এদেরকেই আমরা বলি পথশিশু। যাদের জীবন কাটে ফুটপাতে, রেললাইনের ধারে কিংবা পার্কের কোণে। খেলার মাঠ এদের কাছে এক বিলাসী স্বপ্ন, আর স্কুল কেবলই এক অজানা শব্দ।পথশিশুদের জীবন এক নির্মম সংগ্রামের নাম। ভোর হয় কোনো এক ভাঙা টং দোকানে কিংবা খোলা আকাশের নিচে। দিনের শুরু হয় এঁটো খাবার খুঁজে, কাগজ কুড়িয়ে, ফুল বিক্রি করে কিংবা সামান্য ভিক্ষা করে। পেটের তাগিদে এরা এমন সব কাজ করে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্যও কষ্টকর। সমাজ এদেরকে শুধু অবহেলাই করে না, অনেক সময় এরা নানা ধরনের নির্যাতনেরও শিকার হয়। মাদক চক্র, অসামাজিক কার্যকলাপ এবং নানাবিধ অপরাধের শিকার হয়ে এদের জীবন আরও বিপন্ন হয়ে ওঠে।
এই শিশুদেরও স্বপ্ন আছে। তারাও চায় অন্য শিশুদের মতো সুন্দর জামাকাপড় পরতে, স্কুলে যেতে, পড়ালেখা করতে। তাদের চোখেও থাকে একরাশ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা। কিন্তু দারিদ্র্য আর সামাজিক অবহেলা তাদের সেই স্বপ্নগুলোকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়। একটা বইয়ের পরিবর্তে হাতে আসে একরাশ এঁটো থালা, কলম ধরার বদলে তাদের ধরতে হয় ফুল কিংবা কাগজের ব্যাগ। তাদের শৈশব কেবলই টিকে থাকার এক লড়াই।পথশিশুদের এই করুণ অবস্থা দেখে আমাদের অনেকেরই মন খারাপ হয়। কিন্তু শুধু সহানুভূতি দেখালেই হবে না, আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কেবল সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু করার আছে।
সহানুভূতি নয়, সহযোগিতা: তাদের প্রতি কেবল সহানুভূতি না দেখিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা আমাদের কর্তব্য। শিক্ষার সুযোগ: তাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট কেন্দ্র স্থাপন করে তাদের অক্ষর জ্ঞান দেওয়া যেতে পারে। তাদের উপযোগী কিছু কাজের দক্ষতা শেখানো যেতে পারে, যাতে তারা সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।
নিরাপদ আশ্রয় ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
পথশিশুদের সমস্যা শুধু তাদের একার নয়, এটি আমাদের সমাজের একটি বড় ক্ষত। এই শিশুরা যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, তবেই একটি সুন্দর ও মানবিক সমাজ গড়ে উঠবে। আমাদের প্রত্যেকের সামান্য সহায়তা তাদের জীবনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই শিশুদের হারানো শৈশব ফিরিয়ে দিই।










