বাংলাদেশে, শিক্ষা ক্ষেত্রে কোচিং বাণিজ্য একটি বড়ো সমস্যা। শিক্ষকরা তাদের নিজেদের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তাদের কাছে প্রাইভেটভাবে পড়ার জন্য উৎসাহিত করেন, এবং অনেক সময় ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না। এর ফলে, শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়।
কোচিং বাণিজ্য এক নিরব অভিশাপ
- আপডেট সময় : ০৪:০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫ ৩২৪ বার পড়া হয়েছে
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক নীরব অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোচিং বাণিজ্য। কিছু অসাধু শিক্ষকের লোভের কারণে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে। ক্লাসে ঠিকমতো না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের নিজেদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এর ফলে, শিক্ষা হয়ে উঠেছে একটি বাণিজ্যিক পণ্য, যেখানে জ্ঞান অর্জনের চেয়ে টাকা রোজগারই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষকদের কৌশল
অভিযোগ রয়েছে, অনেক শিক্ষক ক্লাসে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো এড়িয়ে যান, অথবা দ্রুত পড়িয়ে দেন। এরপর তারা শিক্ষার্থীদের বলেন, “এগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে আমার কাছে কোচিং করতে পারো।” এতে করে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। যেসব শিক্ষার্থী কোচিংয়ে যায় না, অনেক সময় তাদের প্রতি শিক্ষকদের আচরণও বৈষম্যমূলক হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব
কোচিং বাণিজ্যের কারণে শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ বাড়ছে। একদিকে স্কুলের পড়া, অন্যদিকে কোচিংয়ের চাপ—সব মিলিয়ে তারা হাঁপিয়ে উঠছে। অনেক সময় তাদের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা তাদের কোচিংয়ে যা পড়ান, পরীক্ষার প্রশ্নেও সেটাই আসে। এর ফলে, শিক্ষার্থীরা আর নিজেদের মতো করে ভাবতে পারছে না।
অভিভাবকদের উদ্বেগ
অভিভাবকদের জন্য কোচিং বাণিজ্য একটি আর্থিক বোঝা। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হচ্ছে তাদের। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই খরচ চালানো অনেক কঠিন। কোচিংয়ের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে অনেক পরিবারকে আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে।
প্রশাসনের ভূমিকা
সরকার কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও এর বাস্তব প্রতিফলন খুব কমই দেখা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একাধিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এই বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে সরকারের কঠোর নজরদারি এবং শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে, ক্লাসে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা জরুরি।
সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধের জন্য শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কার। শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে তাদের আর্থিক চাপ কমানো যেতে পারে। পাশাপাশি, শিক্ষকদের নৈতিকতার উপর জোর দিতে হবে। একইসাথে, অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা কোচিংয়ের পেছনে না ছুটে স্কুলকেই শিক্ষার মূল ভিত্তি হিসেবে দেখেন
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনায় নিহত এক শিক্ষার্থীর মায়ের করুন আকুতি “কোচিং না করলে মিস আমাকে আদর করে না” অবলম্বনে এই লেখাটি উৎসর্গ করা হলো।)










