ঢাকা ০২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্কুলের পোশাক পরেই জীবন সংগ্রামে শিক্ষার্থী ফাহিম

মো.এমরুল ইসলাম জেলা প্রতিনিধি,নরসিংদীঃ
  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২২৯ বার পড়া হয়েছে

গায়ে স্কুলের পোশাক পড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে খাবার বিক্রি করছে এক স্কুল ছাত্র। মাঝেমধ্যে বই পড়ছে ফাঁকা সময়ে৷ কখনো আবার লেখালেখি। মোবাইলকে বই বানিয়ে সেখানেও চোখ রাখছে নিজের পড়ার বিষয়ে৷ যে কিশোর বয়সে লেখাপড়ার টেবিলে থাকার কথা৷ দুরন্তপনা আর অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর খেলাধুলায় মগ্ন থাকার কথা৷ সেই বয়সে বেঁচে থাকার সংগ্রামে প্রাণপনে চেষ্টা করছে এই কিশোর। পিতার মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরতে এভাবেই ভাসমান খাবারের ব্যাবসা করছে অদম্য এক স্কুল শিক্ষার্থী।

নরসিংদীর পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফেকামারা গ্রামের ফারুক ভুঁইয়ার ছেলে ফাহিম (১৭)৷ পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেই এখন নেমেছে খাবার বিক্রির ব্যবসায়৷

সরকারি-বেসরকারী ও দানশীল মানুষের সহায়তা পেলে লেখাপড়ার খরচ ও ব্যবসা করে পরিবারের জন্য কিছু করার ইচ্ছে রয়েছে তার। একিসাথে পুঁজির অভাবে সমস্যায় রয়েছে বলে জানায় এই শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে গিয়েনজানা যায়,শিক্ষার্থী ফাহিমের পিতা ফারুক দেড় বছর পূর্বে শারিরীক অসুস্থতায় মারা যায়৷ দুই বোন এক ভাই এর মধ্যে ফাহিম সবার বড়৷ আকষ্মিক পিতার মৃত্যুর পরে সংসার থমকে যায়৷ লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়৷ টেনেটুনে সংসার চলছিলো বিগত দিনে। শিক্ষার্থী ফাহিম নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে এবং পরিবারের হাল ধরতে নিজেই কিছু করার উপলব্ধি আসে মনে।এরপর থেকে বিগত একমাস ধরে প্রতিদিন নিজের বাড়ি থেকে বিরিয়ানি রান্না করে কটিয়াদী সরকারি হাসপাতালের সামনের গেইটে এনে বিক্রি করে আসছে৷ একই সাথে মা বিরিয়ানি হাউজ নামে পেইজে অনলাইনেও ডেলিভারি করা হয়৷ সপ্তাহে দুই তিনদিন স্কুলে ক্লাসে অংশ নেয়৷ বাকি দিনগুলোতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ব্যবসা নিজেই পরিচালনা করে৷ সে স্থানীয় মুন্সি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

তার সহপাঠীরা গণমাধ্যমকে জানায়, লেখাপড়ায় ফাহিম অনেক ভালো৷ সবসময়ই লেখাপড়ার বিষয়ে সে চিন্তা করে। কিন্তু পারিবারিক অর্থ সংকট তাকে এখন চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ দানশীল কেউ এগিয়ে আসলে তার চিন্তা কিছুটা হলেও কমে আসতে পারতো।

শিক্ষার্থী ফাহিম গণমাধ্যমকে বলেন,একদিকে পড়াশোনা অপরদিকে সংসারের হাল ধরা উভয় নিয়েই চিন্তার মধ্যে থাকি৷ ইচ্ছে থাকলেও প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারিনা৷ কারণ উপার্জন করে তবেই তো লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে হবে৷ কারো সহায়তা পেলে নিজে কিছু করার আগ্রহ রয়েছে৷

মুন্সি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের প্রিন্সিপাল ফজলুল হক আলমগীর জোয়ারদার বলেন,আমাদের ছাত্র ফাহিম লেখাপড়ায় ভালো৷ শুনছি তার পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছে তাদের। পড়াশোনার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহায়তা করার কথাও জানান তিনি।

ট্যাগস :

স্কুলের পোশাক পরেই জীবন সংগ্রামে শিক্ষার্থী ফাহিম

আপডেট সময় : ০২:৩৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

গায়ে স্কুলের পোশাক পড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে খাবার বিক্রি করছে এক স্কুল ছাত্র। মাঝেমধ্যে বই পড়ছে ফাঁকা সময়ে৷ কখনো আবার লেখালেখি। মোবাইলকে বই বানিয়ে সেখানেও চোখ রাখছে নিজের পড়ার বিষয়ে৷ যে কিশোর বয়সে লেখাপড়ার টেবিলে থাকার কথা৷ দুরন্তপনা আর অবসর সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর খেলাধুলায় মগ্ন থাকার কথা৷ সেই বয়সে বেঁচে থাকার সংগ্রামে প্রাণপনে চেষ্টা করছে এই কিশোর। পিতার মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরতে এভাবেই ভাসমান খাবারের ব্যাবসা করছে অদম্য এক স্কুল শিক্ষার্থী।

নরসিংদীর পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফেকামারা গ্রামের ফারুক ভুঁইয়ার ছেলে ফাহিম (১৭)৷ পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেই এখন নেমেছে খাবার বিক্রির ব্যবসায়৷

সরকারি-বেসরকারী ও দানশীল মানুষের সহায়তা পেলে লেখাপড়ার খরচ ও ব্যবসা করে পরিবারের জন্য কিছু করার ইচ্ছে রয়েছে তার। একিসাথে পুঁজির অভাবে সমস্যায় রয়েছে বলে জানায় এই শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে গিয়েনজানা যায়,শিক্ষার্থী ফাহিমের পিতা ফারুক দেড় বছর পূর্বে শারিরীক অসুস্থতায় মারা যায়৷ দুই বোন এক ভাই এর মধ্যে ফাহিম সবার বড়৷ আকষ্মিক পিতার মৃত্যুর পরে সংসার থমকে যায়৷ লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়৷ টেনেটুনে সংসার চলছিলো বিগত দিনে। শিক্ষার্থী ফাহিম নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে এবং পরিবারের হাল ধরতে নিজেই কিছু করার উপলব্ধি আসে মনে।এরপর থেকে বিগত একমাস ধরে প্রতিদিন নিজের বাড়ি থেকে বিরিয়ানি রান্না করে কটিয়াদী সরকারি হাসপাতালের সামনের গেইটে এনে বিক্রি করে আসছে৷ একই সাথে মা বিরিয়ানি হাউজ নামে পেইজে অনলাইনেও ডেলিভারি করা হয়৷ সপ্তাহে দুই তিনদিন স্কুলে ক্লাসে অংশ নেয়৷ বাকি দিনগুলোতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ব্যবসা নিজেই পরিচালনা করে৷ সে স্থানীয় মুন্সি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

তার সহপাঠীরা গণমাধ্যমকে জানায়, লেখাপড়ায় ফাহিম অনেক ভালো৷ সবসময়ই লেখাপড়ার বিষয়ে সে চিন্তা করে। কিন্তু পারিবারিক অর্থ সংকট তাকে এখন চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ দানশীল কেউ এগিয়ে আসলে তার চিন্তা কিছুটা হলেও কমে আসতে পারতো।

শিক্ষার্থী ফাহিম গণমাধ্যমকে বলেন,একদিকে পড়াশোনা অপরদিকে সংসারের হাল ধরা উভয় নিয়েই চিন্তার মধ্যে থাকি৷ ইচ্ছে থাকলেও প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারিনা৷ কারণ উপার্জন করে তবেই তো লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে হবে৷ কারো সহায়তা পেলে নিজে কিছু করার আগ্রহ রয়েছে৷

মুন্সি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের প্রিন্সিপাল ফজলুল হক আলমগীর জোয়ারদার বলেন,আমাদের ছাত্র ফাহিম লেখাপড়ায় ভালো৷ শুনছি তার পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছে তাদের। পড়াশোনার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহায়তা করার কথাও জানান তিনি।